গ্রামবাংলার ঐতিহ্য যখন রূপকথার গল্প

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য যখন রূপকথার গল্প

আজকাল বাংলার গ্রামগুলোতে আগের মতো মেঠোপথ‌ দেখা যায় না। দেখা যায় না ছোট ছোট ঘরের ওপর খড়ের বা টিনের ছাউনি। চোখে পড়ে না গরুর রাখাল বা আঁকাবাঁকা পায়ে হেঁটে চলার পথগুলোকে। কেমন যেন বিলীন হয়ে গেছে গ্রামবাংলার চোখধাঁধানো মনজুড়ানো সেই অপরূপ সৌন্দর্য।

ইট–পাথরের যান্ত্রিক জীবন থেকে হাঁপ ছেড়ে বাঁচার জন্য যখন মানুষ নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে আসত, তখন গরুর গাড়ি, রাখালের রাখালিয়া বাঁশি, শ্রাবণে কাদাজল মেশানো মাটি ও টুপটাপ ঝরে পড়া টিনের চালের ওপর বৃষ্টির শব্দ শুনে সবাই শৈশবে ফিরে যেত। ঘরে শুয়ে জানালা দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদের জোছনা উপভোগের সুবর্ণ স্মৃতি মনে পড়ত। পুকুরভরা মাছ আর বিস্তৃত সবুজ সমারোহ দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যেত। যান্ত্রিকতার কোনো স্পর্শ ছিল না গ্রামে।

প্রতিবছর প্রাইমারি স্কুলগুলোতে অনুষ্ঠিত হতো বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। সেখানে আরও অনুষ্ঠিত হতো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো যেমন হাডুডু, ঘোড়দৌড়, লাঠিখেলা, নৌকাবাইচ, সাইকেল খেলা, ফুটবল প্রভৃতি খেলা। কিন্তু আজ কালের বিবর্তনে হারিয়ে ফেলছে গ্রামবাংলা তার সব অতীত ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি।

এখন গ্রামের অনুন্নত রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে। গ্রামে আর ছোট ছোট টিনের বা খড়ের বেড়ার কোনো ঘর নেই। নেই আগের গরু ও গরুর গাড়ি। এখন শহরের মতো ইট–পাথরের যান্ত্রিক দৃশ্য আমরা গ্রামেও দেখতে পাই।

দালানে দালানে ভরে গেছে প্রতিটি গ্রাম আজ। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় গ্রামের গাছগুলো আজ ফলহীন। আবাদি জমি দখল হচ্ছে, ভরাট করে চলছে আবাসস্থল গড়ার কাজ।

গ্রামবাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি মাছের ঝাঁক—সরপুঁটি, ম‌লা, ঢেলা, টাকি, ট্যাংরা, কই প্রভৃতি সুস্বাদু মাছগুলো। আবাদি জমিতে এখন মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে দেশি মাছ আর বেঁচে থাকার উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে না। ফলে আজ দেশি মাছ বিলুপ্তির পথে।

এভাবে গ্রামবাংলা তার হাজার বছরের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই ঐতিহ্য রূপকথার গল্প হয়ে যাচ্ছে।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার মতো কোনো প্রচেষ্টা কি আমরা করতে পারি না?

মতামত